জ্বলদর্চি

সুকান্ত সিংহ


সু কা ন্ত  সিং হ 

তবু অনন্ত জাগে


কোন্ সময়ের নন তিনি, অন্তত আমার কাছে? যখন আনন্দধ্বনি বিপুল তরঙ্গে ভরিয়ে তোলে চতুর্দিক, তখনও তিনি। যখন ব্যাক্তিগত শোকের দিনগুলি একে একে আছড়ে পড়ে দোরগোড়ায়, যখন সমষ্টির বুকে আছড়ে পড়ে ঝঞ্ঝার দাপট, তখনও তিনি। এভাবেও বলতে মন চায়-- তখনই তিনি।

না, রবীন্দ্রনাথ আমাকে কাছে কোনো প্রফেটের নাম নন। একই ভাবে বিদেশি সিনেমার কোনো সুপার হিরোও নন। মুশকিল আসান করো দোহাই মানিক পীর নন। তিনি শুধুই রবীন্দ্রনাথ, যিনি পথ এবং পাথেয় দুটোর সন্ধানই করেছেন জীবনের কাছে। যে-জীবন রঞ্জনের, যে-জীবন নন্দিনীর, সে-জীবন রাজারও। যে-জীবনের একদিকে আছে অচলায়তন, অন্যদিকে আছে আবার ডাকঘর। দেওয়াল ভেঙে ফেলা যেমন আছে, তেমনি আছে চিঠি আসার অপেক্ষাও। শুধুই বেঁচেবর্তে থাকা নয়, চৈতন্যের ঐশ্বর্য চিনতে পারাও যে জরুরি, এইটি তাঁর মতো কেউ এত সহজ করে দেখিয়ে দেননি। 

অনেক কিছু ভয়ঙ্করের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর মনের দরোজাটাকে বন্ধ করে দেওয়া। শুধু দরোজা খোলা রাখলেই বোঝা যায় জীবনের চেয়ে কখনো কোনো পরিস্থিতি বড় নয়। যেকোনো পরিস্থিতি জীবনের একটা অংশমাত্র। সম্পূর্ণ জীবন নয়। পরিস্থিতি যদি সত্যিই সম্পূর্ণ জীবন হত, তাহলে মারের মুখে দাঁড়িয়েও কিশোর কখনো নন্দিনীর জন্য আনতে পারত না রক্তকরবী। সুধা কোনোদিনই জোর দিতে বলতে পারত না সে অমলকে ভোলেনি। এবং আমরাও কখনো বলে উঠতে পারতুম না মরণ হতে যেন জাগি গানের সুরে। এই জীবন তো কিছু আত্মসাতের সমষ্টি নয়, আত্মগত করারও। 
চার অধ্যায়ে অন্তু সেই যে বলেছিল পুতুলের ছাঁচে নিজেকে ঢালাই করতে দিতে স্পর্ধা করে রাজি হওয়ার কথা, সেই একটা ধাঁচকেই আমরা সব কিছুর মাপকাঠি ধরে দিনের পর দিন চলেছি। এই হল আমাদের অচলায়তনের মূল স্বরূপ। মনেরও, কালেরও। বাকি যা কিছু সবটাই ধোঁয়া ধোঁয়া। উপর উপর। না পারি ঠিকমতো ধরতে, না পারি ঠিকমতো ছাড়তে। দ্বার গান দিয়ে আর খোলে না। বলতে পারি না যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে... 

হ্যাঁ, এই সময়ও আমি আমার রবীন্দ্রনাথের স্পর্শ পাই। মৃত্যু আর বিচ্ছেদ পেরিয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের স্পর্শ। স্পর্শ পাই, কেননা জীবন মানে শুধুই স্পন্দন নয়। অভিব্যক্তিও। 

-------

Post a Comment

0 Comments