জ্বলদর্চি

বিভাস মণ্ডল


বি ভা স  ম ণ্ড ল 

জীবঞ্জয়ী গীতবিতান


সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, শয়নে-স্বপনে-জাগরণে, চেতনে মননে বাঁচার রসদ পেতে রবীন্দ্রসাহিত্যের জুড়ি মেলা ভার। মহাভাবনার উজ্জীবন মন্ত্র নিয়ে যাঁর আবির্ভাব সাহিত্যাকাশে। ঔপনিষদিক, বৈষ্ণবীয় ভাবধারার সঙ্গে সংস্কৃত সাহিত্য ও বাউল তত্ত্বের সম্মেলনে গড়ে ওঠে তাঁর সাহিত্য। স্বভাবতই রবীন্দ্র সাহিত্য যুগ থেকে যুগান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে কালজয়ী হবে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
        সভ্যতার স্তিমিত দীপশিখা যখন নিভু নিভু তখনও শেষ লগ্নে মৃতপ্রায় জাতি তাঁর সাহিত্যের পাতায় ক্ষণিকের আশ্রয় নিলে নিশ্চিত মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে আসার সৌভাগ্য লাভ করে। ক্ষুধা-তৃষ্ণা, অভাব-অনটনে মানুষ দৈহিকভাবে মারা যায় সত্য, কিন্তু চিন্তা চেতনায় ভাবনায় মননে মনুষ্যত্বে বিবেকে বুদ্ধিতে তার মৃত্যু হলে সভ্যতার অবলুপ্ত সাংঘাতিক চেহারা নেয়। এখানে দাঁড়িয়েই আশার আলো প্রাণের স্ফুরণ পেতে সাগ্রহে ধরে নিতে হবে রবি ঠাকুরের 'গীতবিতান'কে। গীতবিতানের অনাবিল সুর মূর্চ্ছনায় তার তাল লয় ছন্দের দোলায় বিশেষ করে কথায় ভাবনায় একবার যে প্রাণে দোলা জেগেছে, সে শত সহস্র বাধা উপেক্ষা করে তারই স্নেহ পরশ লাভে আজীবন উদ্গ্রীব থাকে। 
       নিসর্গ প্রকৃতির অপরূপ মহিমায় উদ্ভাসিত 'প্রকৃতি' পর্যায়ের গানে, অন্তর্দেবতা জীবনদেবতা পরমেশ্বরের সহচর্য লাভে মহানন্দ উদ্ভাসিত হয়েছে 'পূজা' পর্যায়ের গানে, চিরন্তন মানবিক প্রেম 'প্রেম' পর্যায়ের গানে এবং দেশমাতার প্রতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে নিজেকে উজাড় করে দিতে 'স্বদেশ' পর্যায়ের গানগুলো - সেই সঙ্গে সারা বৎসরের বিভিন্ন প্রাণের মিলনোৎসবের গানগুলো জন্ম-জন্মান্তরের খোরাক মেটাতে সক্ষম।
       যতই আসুক ঝড় ঝঞ্ঝা, মহামারী, রবীন্দ্রনাথের 'গীতবিতান' আপামর জনজীবনকে দাঁতে দাঁত কষে মরণজয়ী হবার নিরন্তর শক্তি  জোগায়।

------

Post a Comment

0 Comments