জ্বলদর্চি

অরুণ পাঠক


অ রু ণ  পা ঠ ক

সংশয়তিমির মাঝে


জীবনের যে কোনও পর্যায়ে যে কোনও সংশয়ে যত রকমের পরিত্রাণ প্রত্যাশা করেছি তার সবটাই ওই এক তরীতেই গিয়ে ঠেকেছে—তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নাস্তিক, সেকুলার, অথবা শুধুমাত্র বিজ্ঞান-আদর্শ যাঁরা, তাঁরা একমত নাও হতে পারেন। রবীন্দ্রনাথে আস্থা রাখতে গেলে বিশ্বাস একটা বড় ভূমিকা নিয়ে দাঁড়ায়। হ্যাঁ, বিশ্বাস। বর্তমান বিশ্বের এই সংকট কালে আমি তো বলব—
‘বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা—
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।’
এই নির্ভয়চিত্ত, কর্মপ্রবণ, আশাবাদী, মৃত্যুভয়রহিত সত্তাকেই আমাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। ‘বিশ্ব যখন নিদ্রামগন, গগন অন্ধকার’—তখন আমি বলব—‘এ অন্ধকার ডুবাও তোমার অতল অন্ধকারে।’ আমরা যতবার অস্তিত্বকে নিজের করে অহং দিয়ে ধরতে চাই, ততবারই তা হারাই। তাঁর ওপর যখনই তা ছেড়ে দিই, তখনই অনুভব করি—‘অন্ধকারের মাঝে আমায় ধরেছ দুই হাতে।’ রবীন্দ্রনাথ এ ভাবেই আমাদের তন্ময় হতে শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন বাস্তব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে তাকে যথার্থভাবে অতিক্রম করতে। তিনি লিখেছেন—‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে/ আমার ভয়ভাঙা এই নায়ে’।‘ সংশয়তিমির মাঝে’ যখন কোনও গতি খুঁজে না পাওয়া যায় তখন জগত পতিকেই তিনি প্রেম আলোক সহ প্রকাশিত হতে বলেন। রবীন্দ্রনাথের সীমাহীন আস্তিক্য বোধ আমাদের এটাই শেখায়—‘ মরণের মুখে রেখে দূরে যাও দূরে যাও চলে
 আবার ব্যথার টানে নিকটে ফিরাবে বলে।’

জীবনের আকাশে কাল মেঘ আসে। পৃথিবীতে মানব সভ্যতার আগেও প্রাণী জগত বিধ্বস্ত হয়েছে। মানব সভ্যতাও বহুবার বিধ্বস্ত। মানুষের জ্ঞানই মানবকে রক্ষা করে। রবীন্দ্রনাথ মানুষের মধ্যে সেই মানবকে জাগাতে চান। যে মানবতা অসীমতা প্রাপ্ত। যা মানুষের প্রকৃত সম্পদ।

-------

Post a Comment

0 Comments