জ্বলদর্চি

পিয়ালী ত্রিপাঠী


পি য়া লী  ত্রি পা ঠী 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : বটবৃক্ষের আশ্রয়


বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বিশ্ব যখন মৃত্যুমিছিল গুণতে ব্যস্ত , লকডাউনের অবসরে ঘরবন্দি বাঙালির একমাত্র শান্তির আশ্রয় বাংলা সাহিত্য এবং সর্বোপরি আমাদের একমাত্র মানসিক অবলম্বনের জায়গা বিশ্বকবির লেখা । বিশেষত আমরা যখন অসহায় হয়ে পড়ি , তখন আমাদের আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

১৯১১ সালে মাঞ্চুরিয়ান প্লেগের সময় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “ম্যালেরিয়া-প্লেগ-দুর্ভিক্ষ কেবল উপলক্ষ্যমাত্র, তাহারা বাহ্য লক্ষণমাত্র - মূল ব্যাধি দেশের মজ্জার মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে।” আজ যখন গোটা বিশ্ব সন্ত্রস্ত, প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, তখন এই ইতিহাস আমাদের জানিয়ে দেয় বীভৎসতার জল্লাদ কতটা অসুররূপী। লক ডাউন চলাকালীন বারংবার যখন সরকারি নির্দেশিকায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়,  মনের চিলেকোঠায় রবীন্দ্রনাথের লাইন অজান্তেই ভেসে আসে - " ওগো , আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।" কবিগুরু বলেছিলেন,  "অত্যাবশ্যক শিক্ষার সহিত স্বাধীন পাঠ না মিশাইলে ছেলে ভালো করিয়া মানুষ হইতে পারে না—বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেও বুদ্ধিবৃত্তি সম্বন্ধে সে অনেকটা পরিমাণে বালক থাকিয়াই যায়।" বলাই বাহুল্য এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে এর সার্থক নিদর্শন আমরা দেখেছি কিছু শিক্ষিত মানুষের কাণ্ডজ্ঞানহীন অবুঝ আচরণে । বর্তমানে  "থাকব না আর বদ্ধ ঘরে , দেখবো এবার জগৎটাকে"-- আওড়ানো আপামর বাঙালির অবস্থা যদি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয় তা হবে খানিকটা এইরকম -
" বদ্ধ গৃহে করি বাস 
রুদ্ধ যবে হয় শ্বাস 
আধেক বসনবন্ধ খুলিয়া 
বসি গিয়া বাতায়নে , 
সুখসন্ধ্যাসমীরণে 
ক্ষণতরে আপনারে ভুলিয়া।"

পরিশেষে , একটাই কথা নিজস্ব উপলব্ধি থেকে বলতে পারি যে , আমাদের জীবনে দুঃসময় যতই আসুক , যাঁর চিন্তায় , কর্মে এবং রন্ধ্রে রন্ধ্রে  রাবীন্দ্রিক দর্শন আছে তাঁর পথ সুগম হতে বাধ্য ।
-----------

Post a Comment

0 Comments