জ্বলদর্চি

বিমল মণ্ডল


বি ম ল  ম ণ্ড ল

আজকের সময় ও রবীন্দ্রনাথ 


বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদিত মহাপুরুষ। তাঁর রচিত গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ তো বিশ্বসাহিত্যের অনন্য সম্ভার। তাই রবীন্দ্রনাথ বাঙালির  প্রাণপ্রিয়। এককথায় রবীন্দ্রনাথ মানেই বাঙালি,রবীন্দ্রনাথ মানেই তো কবিতা, কবিতা মানেই রবীন্দ্রনাথ, সাহিত্য মানেই তো কবিগুরু। তিনিই তো পৌঁছে দিতে পেরেছেন সবার হৃদয়ে সর্বকালের কথা। 

রবীন্দ্রনাথ  কোনও সময়েই অপ্রাসঙ্গিক নয়। সারা বিশ্বজুড়ে তিনি সব সময়ের জন্য উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো মানুষের কথা লিখেছেন। লিখেছেন মানবমনের যন্ত্রণা।কবিতায় ও সাহিত্যে  ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন  মানুষের মধ্যে জমে থাকা ছোটো ছোটো ব্যথাকে। 
তিনি নিজেই ভুগেছিলেন মনোকষ্টে। সারাজীবন ধরে বারবার তাঁকে দহন করত যন্ত্রণা । তিনি যেন সবার মধ্যে থেকেও ছিলেন একা। তিনি মনে করতেন --
        'চিনিলাম আপনারে
          আঘাতে আঘাতে  
          বেদনায় বেদনায়।'    
তিনি বিশ্বাস করেন যে -- প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ আর বেদনা থাকে সারাটা জীবন। তবে তিনি  সবার আগেই   মন থেকেই বুঝতে পারতেন ঈশ্বরের স্বরূপ এককথায় তিনিই ঈশ্বর স্বরূপী।  
আমাদের এই সময়ে অর্থাৎ কোভিড-১৯ মারণ ব্যাধির প্রকোপে সারা বিশ্ব মৃত্যু সাগরে পতিত। আর তখনই আমাদের রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ যখন শান্তি নিকেতনে ছিলেন, তখনই ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছিলো জ্বর। আর সমস্ত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। বহু জায়গায় মহামারিও দেখা দিয়েছিলো।শান্তিনিকেতনও  তার থেকেই রেহাই পায়নি। সেই মহামারির নাম ছিলো  'ইনফ্লুয়েঞ্জা'  যা  "যুদ্ধজ্বর" নামে পরিচিত। তখনও সারা বিশ্বের মতো তাঁর প্রিয় শান্তিনিকেতনের স্কুল ও আশ্রমে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এই মারণরোগ। বহু মানুষ মারা গেলেও  তাঁর পরিশ্রম একেবারে বৃথা যায়নি। বহু ছাত্র-ছাত্রী ও অন্যান্য মানুষদের নিজ হাতে সেবা করতেন আর শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবরও নিতেন। আর তাছাড়া তিনিই নিজেই নিজের হাতে এই মারণ রোগের চিকিৎসাও করতেন। বিভিন্ন গাছের পাতা শেকড়-বাকড় দিয়ে। সেই সময়ের সেই মারণ রোগ আজ এই সময়ে মনে করিয়ে দেয় সর্বকালের রবীন্দ্রনাথকে। কারণ রবীন্দ্রনাথের "যুদ্ধজ্বরের" মতো বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সেই একই উপসর্গ। কিন্তু এই রোগের কোনো টীকা কিংবা ঔষধ না থাকায়  লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে। আক্রান্তও হচ্ছে বহু মানুষ। রবীন্দ্রনাথ যেমন ভাবে গাছ-গাছালি দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করেছিলেন, তাতে বহু মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছিলো।  তাই এই মারণ ভাইরাস থেকে বাঁচতে রবীন্দ্রনাথের মতো প্রাথমিকভাবে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। যেভাবে মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তার থেকেই রেহাই পাওয়া আমাদের সহজ হবে না। তাই এর থেকে বাঁচতে গেলে --আমাদেরকে করোনার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। এছাড়া আমাদের আর কোনও পথ নেই। 
সুতরাং আজ এই বীভৎস মারণ রোগের মৃত্যুতেও রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করি। কত কালজয়ী পথ পেরিয়েও রবীন্দ্রনাথ সর্বদা বিশ্ববাসীর  কাছে পূজ্য  হয়ে থাকবেন।

--------

Post a Comment

0 Comments