জ্বলদর্চি

মধুমিতা মহাপাত্র


ম ধু মি তা  ম হা পা ত্র 

তোমারে স্মরণ করি আজ এই দারুণ দুর্দিনে 


গভীর এক সংকট সময়ে এসে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। বিশাল ভয়ের এক নোঙ্গর স্তব্ধ করে দিয়েছে মানব সভ্যতার ছন্দময় তরণীকে। মৃত্যু, যন্ত্রণা, স্বজন হারানোর বিভীষিকা এনে এক অতি মহামারী রুদ্ধ করেছে স্বাভাবিক জীবনের চলমান গতিপথ। নির্জনতা, নির্মমতা ,নৈরাশ্য আজ নিত্য সহচর। উৎকণ্ঠাময় আগত ভবিষ্যৎ। বিজ্ঞানের আশ্বাস কোন সুদূরে...। এ ঘোর দুর্দিনের অবলম্বন হয়ে উঠতে পারে সাহিত্যের মানবতাবোধ ও আশাবাদী চিন্তা।তাই কবি বুদ্ধদেব বসুর সুরে ,কবিগুরুর উদ্দেশ্যে বলতে হয়- " তোমারে স্মরণ করি আজ এই দারুণ দুর্দিনে হে বন্ধু ,হে প্রিয়তম"।কারণ যুগজীবনের প্রতিটি কর্মে ও অনুভবে যাঁর শরণ নেওয়া যায় তিনি রবীন্দ্রনাথ। সুখের মাঝে যাঁকে দেখা যায় ও দুঃখের মাঝে যাঁকে প্রাণভরে পাওয়া যায়।
স্বাধীন চিন্তা ভাবনার সূচনা লগ্ন থেকেই ঔপনিষদিক  তত্ত্ব ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। আমিত্বের বন্ধনমুক্তি ঘটিয়ে তাই আত্মশক্তির উদ্বোধন চেয়েছেন বারবার। সৃষ্টিসম্ভারেও ঘটেছে তার ছায়াপাত।মানবতাবোধে নিবেদিত প্রাণ কবিগুরু মানুষের কল্যাণে ,মনুষ্যত্বের জাগরণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন আজীবন।সংস্কার ও ধর্মবিশ্বাস মানবতাবাদী হোক, মানুষের প্রয়োজনে লাগুক, সেজন্য মানুষকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে শুভা শুভবোধের উদ্বোধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। জীবনের সার সত্যকে উপলব্ধি করেছিলেন বলেই  জীবনের প্রতি বিশ্বাস ধ্বনিত হয় সৃষ্টির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। 'পৃথিবীতে ধৈর্যের সাধনাই কঠিনতম সাধনা'- একথা অনুভব করেছিলেন, সেজন্য ধৈর্যের তপস্যা করে গেছেন জীবনভর। চরম দুঃখের দিনে ধৈর্যই তাঁকে দেখিয়েছে উত্তোরণের দিশা।মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তাই উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ীর মন্ত্র।
কবিগুরু মনের অলিন্দে বসে আশাবাদী চিন্তা, মনুষ্যত্বের পাঠ, ও ধৈর্যের সাধনা উপহার দিয়ে গেছেন সমাজকে।তাই আজ যখন বিশ্বজুড়ে মহামারীর সংক্রমণ, সভ্যতা শ্মশানে পরিণত ,তখন ধৈর্য, আশা, আত্মবিশ্বাস ,মানবিক আচরণ -এর মত তাঁর অক্ষয় মন্ত্র- ই ঘোষণা করতে পারে 'জীবনেরই জয় হবে ,জানি'।

-------

Post a Comment

0 Comments