জ্বলদর্চি

রাকেশ সিংহ দেব


রা কে শ সিং হ  দে ব

রবীন্দ্রচেতনায় পরিবেশ ও মানবসভ্যতা


আজ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলছে মানবসভ্যতা। নেপথ্যে করোনা ভাইরাসের রক্তচক্ষু না প্রকৃতির প্রতিশোধ তার যাবতীয় হিসেবনিকেশ আজ স্পষ্ট। পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে একুশ শতকে মানবিক বোধোদয়ের পরিধি কতটুকু বেড়েছে তা নিয়ে নিজেরাই যথেষ্ট সন্দিহান ! 
  ভাবতে বিস্ময় জাগে, আজ থেকে প্রায় দুইশত বছর আগে কিশোরবেলায় বাবার সাথে ট্রেনে চেপে যেতে যেতে রাঢ় বাংলার লালমাটির বুকে প্রকৃতির শান্তিনিকেতনের স্বপ্ন দেখেছিলেন এক ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। বিশ্বমানব হয়েও জীবনের সায়াহ্নে সেই লালমাটিয়া শান্তিনিকেতনে কাটিয়েছিলেন আশ্রমিক জীবন। এভাবেই পৃথিবীর বুকে মহামানবদের আবির্ভাব ঘটে যাঁদের চিন্তাভাবনা, দর্শন নির্দিষ্ট সময়বৃত্তের বাইরে হয়ে ওঠে সর্বকালের। যাঁরা বিশ্বাস করেন জীবনের যা কিছু প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি তা নির্ধারণ করে প্রকৃতি পরিবেশের সাথে আমাদের আচরণ। কবিগুরুর পরিবেশ চেতনা ও মানবসভ্যতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটি ছিল এই বিশ্বাসের উপর। শান্তিনিকেতনের আবাসিকদের নিয়ে ওঁনার 'বৃক্ষরোপণ উৎসব', 'বর্ষাবরণ উৎসব' সেই আস্থাশীল পরিবেশ চেতনার শাশ্বত বার্তা দিয়ে আসছে। মানব জীবনচর্চার যে পদ্ধতির কথা তিনি বলেছেন তা 'Living in Nature'। মাতৃগর্ভ যেমন জীবনের ভ্রূণকে ধারণ ও পালন করে, সেভাবেই প্রকৃতি মানুষকে ধারণ করে, পালন করে মাতৃস্নেহে। প্রকৃতির উপর অত্যাচারে নেমে আসে প্রলয়! 
"পৃথিবী আপন প্রাণের জিনিস খুশি হয়ে দেয় কিন্তু যখন তার বুক চিরে মরা হাড়গুলিকে ঐশ্বর্য বলে ছিনিয়ে নিয়ে আস, তখন অন্ধকার থেকে এক কানা রাক্ষসের অভিসম্পাত নিয়ে আস ......."
[রক্তকরবী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ]

  বিশ্বায়নের প্রভাবে ক্রমশ বাণিজ্যিক পণ্য হতে বসা প্রকৃতি পরিবেশের প্রতি চিন্তাভাবনার পরিবর্তন এসময় থেকে করা প্রয়োজন। মানবসভ্যতার  অস্তিত্ব রক্ষার এই সঙ্কটকালে বিশ্বকবির পরিবেশ চেতনার দর্শন হয়ে উঠবে মানবসভ্যতার স্থিতির বীজমন্ত্র !

------

Post a Comment

0 Comments