জ্বলদর্চি

সুদর্শন নন্দী


সু দ র্শ ন  ন ন্দী                       

এই সংশয়-জীবনে তিনিই আশ্রয়


মূল ও মূল্যবান কথাটি প্রথমেই বলে নিই। তা হল  বর্তমানের এই সংশয়-জীবনে নিশ্ছিদ্র ও নিশ্চিন্ত আশ্রয় দিতে পারে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। শুধু আশ্রয়ই নয়, সংশয়ের দিনগুলির মধ্যেই কবিগুরুকে আশ্রয় করে আমরা অপেক্ষা করতে পারি নব রবিকিরণে শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে নব আনন্দে জাগার দিনগুলির জন্য। যা আসবেই আসবে।  
আকাশ ভরা সূর্য তারা এই প্রাণের আধার পৃথিবীতে জীবনের ছন্দ যে এভাবে কেটে গিয়ে আতঙ্কই মানবজীবনের শয্যাসঙ্গী হবে তা কদিন আগেও  ভাবতে পারেনি কেউ।  
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এই সংশয় জীবনে রবীন্দ্রনাথই ভরসা। সেজন্য তাঁর  সাহিত্য দর্শনের সাথে আপন মনটিকে টিউনড করে নিতে হবে। তাঁর সৃষ্টির তরঙ্গে মেলাতে হবে আপন অনুভূতির তরঙ্গকে। 
  পজিশন ও পজেশন অর্থাৎ পদ  ও পদার্থসর্বস্ব (ধনদৌলত, সম্পত্তি ) এই মনুষ্যকুল যদি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির আলোয় জীবনের প্রকৃত সত্তা খুঁজে পান তবে এই জীবন কোন আতঙ্কেরই জন্ম দেবে না বলেই বিশ্বাস করি। মহামারির এই যে আতঙ্ক তার মূল চিন্তা তো একটাই-- মৃত্যুভয়।  
মৃত্যুর সাথে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় আকৈশোর। সারাজীবন প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথায় কাতর হয়েছেন। আবার বাবার হাত ধরে  ছেলেবেলা থেকে ব্রহ্মদর্শনের সঙ্গে পরিচয়। 
ব্যক্তিগত মৃত্যুদর্শন আর এই ব্রহ্মদর্শনে দীক্ষিত হয়েই জীবন-মৃত্যু নিয়ে তাঁর নিজের দর্শন গড়ে উঠেছিল। মৃত্যুঞ্জয়ী লিখলেন- নিবিড় ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা।/ মন রে মোর, পাথারে হোস নে দিশেহারা।  বললেন, কষ্ট যদি দাও হে প্রভু, শক্তি দিও সহিবারে। 
এই জীবন দর্শন, সাহিত্য-দর্শন যে কোনো মানুষকেই উজ্জীবিত করবেই আজকের এই সঙ্কটসময়ে। এই বিপদে তিনি স্থির থাকেন যিনি জীবন-মৃত্যুকে সমদৃষ্টিতে দেখেন। কবি তো বলেইছেন, মৃত্যু আপন পাত্রে ভরি বহিছে যেই প্রাণ,সেই তো তোমার প্রাণ। তিনিই শিখিয়েছেন, বিপদে রক্ষা নয় বিপদকে যেন ভয় না করি। 
বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা-বিপদে আমি না যেন করি ভয়। 
.....দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।  
তাই বলতে পারি জীবনতরীখানা বাইতে বাইতে এই যে তুফানের সম্মুখীন আমরা তার জন্য হাল ছাড়ব না। কবিগুরুকে আশ্রয় করে নবরবিকিরণের অপেক্ষায় থাকব।

------

Post a Comment

0 Comments