জ্বলদর্চি

সন্দীপ দত্ত


স ন্দী প  দ ত্ত

রোদ্দুরে ভেসে যাক সমস্ত পৃথিবী


বাঁচার স্পৃহাটা আমাদের আজকের নয়। সভ্যতাকে যেদিন থেকে বুকে নিয়েছি, রোদ্দুরের ওম্ মাখতে ইচ্ছে করেছে বার বার। সে যেমন আলো হয়ে চলার হোঁচট থেকে বিরত করে, ভেজা বাতাসকে শুষ্ক করবার মন্ত্রও আছে তার। রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে রোদ্দুর সম।
    দিশেহারা আমরা আগেও হয়েছি। বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত হৃদয়কে মুচড়ে দিয়েছে, পরাধীনতার যন্ত্রণা স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে গতি, মন্বন্তরের করাল গ্রাস আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে ফাঁদ পেতেছে। সেইদিনগুলোতে রবীন্দ্রনাথের অভয়বাণী আমাদের মনোবল বাড়িয়েছিল। আমরা উঠে দাঁড়াবার শক্তি পেয়েছিলাম। ঘুরে দাঁড়াবার সাহস। সেদিনও ছিল বিশ্বজুড়ে কালো মেঘের দাপাদাপি। দানব হয়ে নেমে এসেছিল দুর্দিন। আমরা আকুল কণ্ঠে হাত বাড়িয়ে চেয়েছিলাম রবিকিরণ। কেননা, মেঘলা পথে হাঁটা যায় না।
    আজ আবার একটা দুর্দিন। থমকে যেতে চাইছে আমাদের পা। মেঘ নামাচ্ছে আঁধার। তাই রোদ্দুরের প্রার্থনা করি। সে এসে আমাদের অন্তর প্রকৃতির অঙ্গনজুড়ে আলোর আলপনা আঁকুক। আমাদের ভেজা হৃদয়কে শুষ্ক করবার মন্ত্রণা দিক কানে। আমরা যে বাঁচতে চাই !
    বাঁচতে গেলে হাঁটতে হয়। হাঁটতে গেলে নামতে হবে পথে। পথের সঙ্গী হোক আলো। আর আলোর উৎস রবীন্দ্রনাথ।
    পৃথিবীতে কী অমোঘভাবে ঘটে চলে সব ! চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে, করোনাকে ধ্বংস করতে পারে একমাত্র রোদ্দুর। করোনা তো শুধুই ভাইরাস নয়। করোনা আমাদের শত্রু। আমাদের মনোবলকে ভেঙে ফেলবার, আমাদের প্রাণস্ফূর্তিকে বিবর্ণ করবার এক ভয়াল বিভীষিকা। চলার পথের প্রতিবন্ধক। রোদ্দুর রবীন্দ্রনাথ তাই ভীষণ কাঙ্ক্ষিত হয় মনে। মানুষ তো কেবল দেহে বাঁচে না। বেঁচে থাকার অর্থ অনেক। সমস্ত অর্থের মূল কেন্দ্রে বিরাজ করেন ঐ একজন। রবীন্দ্রনাথ।
    তাই আজ রোদ্দুরের খুব দরকার আমাদের। রোদ্দুরের জোয়ার এসে ভাসিয়ে দিক এ পৃথিবী। আলো হয়ে উঠুক হৃদয়ঘর। আরো একটিবার কান স্পর্শ করুক কবির সেই আর্শীবাণী "প্রত্যহ নীরবে আমার আশীর্বাদ তোমাদের প্রতি ধাবিত ও প্রবাহিত হচ্ছে। আমার আশীর্বাদ আজ নূতন বেশে তোমাদের কাছে উপস্থিত হোক, সুন্দর বেশে তোমরা তাকে গ্রহণ কর।"
     হে কবি ! প্রণাম নিও আমাদের। বুক ভরে সাহস দাও, যেন তোমার মতোই দৃপ্ত কন্ঠে বলতে পারি "আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়ো।"
--------

Post a Comment

0 Comments