জ্বলদর্চি

রূপককুমার হাতী


রূ প ক কু মা র  হা তী

তোমার সৃষ্টিরা থাকে জেগে


‘অবগাহনই করিলাম,কিন্তু কূল পাইলাম কী?’ না! কূল পাইনি। শৈশবের আলো-আঁধারির মধ্যেই বাঙালির পরিচয় ঘটে প্রাণের ঠাকুর-রবি ঠাকুরের সাথে। কিন্তু আমৃত্যু অনুসন্ধানেও অধরাই থেকে যান –স্বভাব কবি। ‘রবীন্দ্রসাহিত্য সাগরের উপকূল’-এ পৌঁছানো হয়ে ওঠে না।

ফরাসী দার্শনিকদের লেখনী সে দেশের জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিল--অত্যাচারের প্রতীক ‘বাস্তিল’ দূর্গের পতন ঘটাতে। দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধের ভয়ঙ্কর তাণ্ডবলীলা,জঠরাগ্নি,মৃত্যুর নিশ্চিত হাতছানিকে উপেক্ষা করে,কবি সুকান্তকে বাঁচার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল--'রবীন্দ্রসাহিত্য’। কবির কথায়-“মনের গভীর অন্ধকারে তোমার সৃষ্টিরা থাকে জেগে।"
      
 যত দিন যাচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রা ততই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। মানুষের মধ্যে লোভ-লালসা-হিংসা স্বার্থপরতা-ধর্মান্ধতা প্রভৃতি অপগুণগুলি বাসা বাঁধছে। মানুষ নিঃসঙ্গতা-অবসাদে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অপরাধমূলক কাজ-কর্ম দিনেদিনে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে অপসংস্কৃতি গ্রাস করে ফেলছে ‘জাতির সম্পদ’--যুব সমাজকে। ফলে তারা নানারকম অসামাজিক কাজ-কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এই ধ্বংসের হাত থেকে গোটা জাতিকে বাঁচাতে পারে –‘রবীন্দ্রসাহিত্য সম্ভার’। অনুপ্রাণিত করতে পারে ‘মোরে আরও আরও আরও দাও প্রাণ’, ‘বিপদে যেন করিতে পারি জয়’, ‘ওরে সবুজ,ওরে আমার কাঁচা/আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’, ‘তোমায় কেন দিইনি আমার সকল শূন্য করে’-প্রভৃতির মতো অনুপ্রেরণামূলক পংক্তি।

আমরা যতটা বলছি তার সামান্য অংশও গ্রহণ করছি না। তার উপর 'ডিজিটালাইজেশান'-র ফলে অধিকাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এতই মশগুল যে তার সাহিত্যপাঠের বিন্দুমাত্র অবসর নেই। অথচ দেখা গেছে ওই সব মাধ্যম ,মানুষের ভাল না করে বরং তাকে বিপথগামী করছে। কিন্তু সে যদি রবীন্দ্রসাহিত্যসম্ভারে বিন্দুমাত্র মনোনিবেশ করত তাহলে উত্তরণের একটা পথ খুঁজে পেত। রবীন্দ্রসাহিত্যের রস আস্বাদন করে মনোমন্দিরকে প্লাবিত করতে পারত এক অপার্থিব আনন্দে। তাছাড়া ইন্টারনেট বা প্লে স্টোর থেকে আমরা রবীন্দ্ররচনাবলীর যে সামান্য অংশ পাই তা অধিকাংশই প্রতিবেশী বাংলাদেশের। অথচ পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি জনবহুল রাজ্যে রবীন্দ্রসাহিত্য তথা বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার কোনো প্রচেষ্টাই নেই, যা বর্তমান অস্থির কালপর্বে বিশেষ প্রয়োজন। পরিশেষে কবি সুকান্তের ভাষায় বলি "যদিও রক্তাক্ত দিন, তবু দৃপ্ত তোমার সৃষ্টিকে  
 এখনো প্রতিষ্ঠা করি আমার মনের দিকে দিকে।"  

---------

Post a Comment

0 Comments