জ্বলদর্চি

কেশব মেট্যা


কে শ ব  মে ট্যা

আঁখি নাই বাঁধি নাই


'আঁধার রজনী আসিবে এখনি মেলিয়া পাখা, 
সন্ধ্যা- আকাশে স্বর্ণ- আলোক পড়িবে ঢাকা।' 

জীবন নিয়ে  এই সংশয়, এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের আলো আঁধারী যে খেলা চলছে পৃথিবীময়, তা কি সকল মানুষের! কিংবা এই মৃত্যু ভয়, তাও কি এই প্রথম? মানুষের অসহায়তার  শুরু কি এই ? রবিঠাকুরের আগে মানুষ কি বাঁচতো না? তবে কি সেই বাঁচা, বাঁচা ছিল না? আচ্ছা এই সময়ে রবিঠাকুর কি সকলের কাছে আছেন? 

 এই যে লকডাউনে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক পথে বেরিয়ে পড়েছিল তাদের ঘর তাদের  উৎসের উদ্দেশ্যে, জীবনের কাছে এই আবেদন এই জোর নিয়ে --
 'উৎস উঠিতেছে যেথা সে গোপন পুরে 
আমায় লইয়া যাও - রাখিয়ো না দূরে। '
সেই ঘরে কি রবিঠাকুর ছিলেন ? সেই নিজের ঘরে কি তাদের খিদের ফুরান ছিল? তাহলে কেন মৃত্যুভয় কে তুচ্ছ করে বেরিয়ে পড়া! এতোদিন যে ছাদ  তার রক্তঘামের পরিশ্রমের সাক্ষী , সে ছাদ দুর্দিনে তার আশ্রয় হতে পারল না! নিজের রাষ্ট্র তার খিদে মেটায় না, দেয় না অধিকাংশের শুশ্রূষার অধিকার। সেখানে রবিঠাকুর তো সো কলড ভদ্রলোকের আনন্দ মনখারাপের উৎযাপনের সঙ্গীমাত্র। 

'বিপদে আমি না যেন করি ভয়' এই রবিমন্ত্রকে জপমালা করেই আমরা  বিপদে পড়লে আস্তিক, আবার ধর্মযুদ্ধে হয়ে উঠি ধার্মিক। বক্তৃতা আর দেখানো বিপ্লবের সাধনা করতে করতে রবিঠাকুর কেও আমরা ঠাকুরের আসনে বসিয়ে পুজো করেছি মাত্র। তাঁকে গভীরে বুঝিনি। তাঁর সুধা আড়াল করে অন্ধকারকে জিইয়ে রেখেছি আমরা, আমরাই। যেটুকু ব্যতিক্রম সে তো অগাধ সমুদ্রের এক আঁজলা জল। 'আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া’ মুখে কতবার বলেছি, কিন্তু পেরেছি কি বাইরে দাঁড়াতে ! রবিঠাকুর নিয়ে আমরা বানিজ্য করি, তাঁর কর্মপন্থা আদর্শ অনুসরণ করি না। মুখে বলি তিনি প্রতিদিনের, কিন্তু মানিনা। অথচ দিনদিন তিনিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। অনিবার্য মনের ঔষধ। অথচ সেই 'মন' টা উদার করার পথেই ছড়িয়ে রেখেছি আমাদের শৃঙ্খলাহীন যাপন আর গাইছি ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়'।

---------

Post a Comment

0 Comments