জ্বলদর্চি

নীলোৎপল জানা


নী লোৎ প ল জা না

এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ


'আজি মোর দ্বারে  কাহার মুখ হেরেছি।
জাগি উঠে প্রাণে গান কত যে।
গাহিবারে সুর ভুলে গেছি রে।’

সত্যই আজ আর কথা বলার অবস্থায়  নেই মানুষ।বিশ্ব আজ বিপর্যয়ের মুখে। করোনা ভাইরাস জন-জীবনকে  স্তব্ধ করেছে। চলছে লকডাউন। কাজ নেই, নেই ব্যস্ততা। এই অবস্থা প্রথম এক সপ্তাহ  ভালো লেগেছিল। তারপর থেকেই অলস সময় যেন কাটতেই চায় না। যখন সকল মানুষ দিশেহারা, আর তখনই মনে আসে কবিগুরু।
 ‘বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা/  বিপদে আমি না যেন করি ভয়’।

আবার কখনো উদাত্ত কন্ঠে গেয়ে উঠি--- 
                                
 ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে /
     একলা চলো রে।'
রবীন্দ্রনাথ  শুধু কবিগুরু নয়, হৃদয়ের আরাম; প্রাণের শান্তি। আমি যখনই  দুঃখ পাই কবিগুরুর কাছে আসি।যখনই আনন্দে ভাসি তখনও কবিগুরু।এই লকডাউনে হাতে তুলে নিই ‘শেষের কবিতা’।
  ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধন হীন গ্রন্থী
   আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী।’
সমস্ত অলসতা ভুলে ফিরে পাই জীবনের  রোমান্টিক  মুহূর্তগুলো। কখনো খুলে ফেলি ‘গীতবিতান’এর পাতা।কখনো ‘বলাকা’র চরণ উচ্চারণ করি--
    ‘তোমার শঙ্খ ধুলায় পড়ে,
     কেমন করে সইবো?
     বাতাস আলো গেল মরে ,
     এ কিরে দুর্দৈব!’
আসলে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আমার জীবন অচল হয়ে পড়ে। যখন বিশ্বময় অন্ধকার তখন আমার কবির এই গানটি মনে পড়ে ---
    ‘আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা’।
তখন আমার সমস্ত অন্ধকার দূরীভূত হয়।আসলে আমি যে পথেই হাঁটি না কেন, যে আলো জ্বালাই না কেন , যে ভাবনা ভাবি না কেন --সে আলো তাঁর। এই সময়ে বারবার  মনে পড়ছে রবীন্দ্রনাথই এই অলস সময়ের মুক্তির একমাত্র উপায়। অর্থাৎ কর্মেও তিনি,অবসরেও তিনি। ঠাকুর আছে বা নেই জানি না, আমি মানি একজনই ঠাকুর, তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি আমার পরাণসখা বন্ধু। এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাঙালির মুক্তির উপায় নেই।

----------

Post a Comment

0 Comments