জ্বলদর্চি

অনির্বাণ দাশ


অ নি র্বা ণ  দা শ

ওই মহামানব


মানুষের ঐহিক জীবনে যে-সব আকাঙ্ক্ষা থাকে তার প্রায় সবই রবীন্দ্র-জীবনে অর্জিত হয়েছিল। মানুষের স্মৃতিকোঠায় চিরদিনের আসন-লাভ যদি পারমার্থিক আকাঙ্ক্ষা হয় তবে সেটাতেও সফল রবীন্দ্র-প্রতিভা। --- তাঁর গান বাঙালিকে গাইতেই হবে বলে তাঁর বিশ্বাস ছিল। আজ এই সত্য উজ্জ্বলভাবে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর অসংখ্য কীর্তি - সাহিত্য - সমাজ - রাষ্ট্রচিন্তা - বিশ্ব নাগরিকত্ব - সমবায় গঠন - বিশ্ববিদ্যার চর্চাকেন্দ্র স্থাপন সবেতেই তিনি বিশেষভাবে সফল।

আজ যখন আমাদের জীবন বিপন্ন তখনও তৃষ্ণার শান্তি খুঁজে পাই সেই সুন্দর কান্তির কাছেই। --- আমাদের ক্ষণিকের জীবনে একদিকে স্থূল ভোগলিপ্সা অন্যদিকে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম, একদিকে আত্মরক্ষা অন্যদিকে আত্মহনন। পরমাণু-যুদ্ধের বিভীষিকা, বিশ্ব-উষ্ণায়নে ও পরিবেশদূষণে সভ্যতার সংকট। নতুন নতুন মহামারীর আবির্ভাব ও মানুষের অসহায়তার এই প্রেক্ষিতে  রবীন্দ্রনাথ কী বিরাটভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন। ---
" ব্যাঘাত আসুক নব নব, 
আঘাত খেয়ে অচল র'ব
বক্ষে আমার দুঃখে বাজে তোমার জয়ডঙ্ক। 
  দেব সকল শক্তি, ল'ব অভয় তব শঙ্খ। "

এই চরম দুর্দিনে  দুঃখ-বেদনায় যদি কোনো কবির বাণী মানুষকে শান্তি দিতে পারে তিনি রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথই আমাদের মহাশঙ্খ। আমাদের সকল শক্তি।আমাদের অভয়।

কিন্তু এই মহাকবি, মহাপ্রতিভার নিজের ব্যক্তিজীবন ছিল অনাবিল বেদনায় পূর্ণ। সন্তান পত্নী আত্মীয় বিয়োগের শোকে আচ্ছন্ন। সভ্যতার মহাসংকট তিনি দেখেছিলেন দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধে, দেখেছিলেন প্লেগের মড়ক। মানবতার চরম লাঞ্ছনাতেও বলতে পেরেছিলেন, "মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।" --- পৃথিবীর মানুষ তবু বারবার তার আদিম হিংস্র মানবিকতার বীভৎসতা নিয়ে, লোহার হাতকড়ি নিয়ে লুঠ করেছে মানবতা। কবি আশা ছাড়েননি।--- কবিকে আমরা হারাতে চাই না। শুধু সরস্বতীর আসনে নয়, মানবের হৃদয়ে তাঁর অবস্থান। তাঁর প্রেরণা পথিকের অনন্ত পাথেয় হয়ে বিরাজ করুক।

------

Post a Comment

0 Comments