জ্বলদর্চি

অসীম ভুঁইয়া


অ সী ম  ভুঁ ই য়া 

এই সংশয়ে তিনি...
 

"কোথা তুমি শেষবার যে ছোঁওয়াবে তব স্পর্শমণি/ আমার সংগীতে /মহানিস্তব্ধের  প্রান্তে কোথা বসে রয়েছ, রমণী,/  নীরব নিশীথে?"

রবীন্দ্রনাথ ? রবীন্দ্রনাথ ! রবীন্দ্রনাথ । মহাসংশয়ের  অমানিশায় বিশ্ব  বিপর্যয়ের সরণি বেয়ে বিশ্বজননী নয়, বিশ্বরমণী, যেন নীরবতার মৃত্যুময় পাঠে নিমগ্ন । "নদী বহি চলে প্রান্তরের শেষে," "সূর্য অস্ত যায়," "অন্ধকারে ধীরে ধীরে সন্ধ্যাতারা দেখা দেয় দিগন্তের ধারে।" বড়ই আনমনা হয়ে পড়ি আমরা । 

   বাংলা কবিতার প্রধানতম স্তম্ভ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব-সংশয়ের পূর্ব বাণী কত দিন, কত বছর আগেই রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টি প্রবাহে । প্রাণের অফুরন্ত সম্পদে পরিপূর্ণ মানুষটি সমগ্র মানবসত্তা সম্পর্কেই বলে গেছিলেন হয়তো- "সৃষ্টিকর্তা পুরো সময় দেননি আমাকে মানুষ করে গড়তে,/ রেখেছেন আধাআধি করে।" তাই আমরা আজ ঘোরসংকটের, বেঘোর-সংশয়ের  দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে মৃত্যুরই নান্দীপাঠ করছি ।  মৃত্যু পরম্পরার অদ্ভুত পথক্রমায়  হৃদয়ের শেষ সুধাটি  নিয়ে কি আমরা আরো একবার রবি ঠাকুরের প্রাণের তরী  নিয়ে মধুর উৎস ধারায় পৌঁছতে পারব না ?  তিনি তো কতবার, বারবার বলে দিয়েছেন - "এ দ্যুলোক মধুময়, মধুময় পৃথিবীর ধূলি- / অন্তরে নিয়েছি আমি তুলি,/ এই মহামন্ত্রখানি / চরিতার্থ জীবনের বাণী ।"  আর আমরা তো নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থতার উলঙ্গ রূপের 'নটরাজ নৃত্যে ' সদা ব্যাপিত । বিশ্ব ধ্বংসের  বীজপত্রটি তো আমরাই    পুঁতে ফেলেছি পৃথিবীর উর্বর মাটির স্বর্ণ-সুষমায় ...  তবু তো পথ শেষ হয়নি, শেষ হবেও না কোনোদিন।
"খর মধ্যাহ্নের তাপে/ জয়-পরাজয়ের আবর্তনের মধ্যে" "ক্ষত বক্ষের"  "রক্তধারা"- "কাঁটা" পায়ে আজও তো বাঁচার শেষ মন্ত্র শুনিয়ে চলেছেন তিনিই, যিনি  সংশয়ের মাঝেও  অমৃতের দিশারী-  "স্মরণের আবরণে মরণেরে যত্নে রাখে ঢাকি / জীবনেরে কে রাখিতে পারে ! / আকাশের প্রতি তারা ডাকিছে তাহারে,/  তার নিমন্ত্রণ লোকে লোকে /  নব নব পূর্বাচলে আলোকে আলোকে ।" 

--------

Post a Comment

0 Comments