জ্বলদর্চি

বিশ্বজিৎ সাহু

 
বি শ্ব জিৎ  সা হু  


ভবতরী ও ঈশ্বর
 
বাসস্ট্যান্ডে এলে ঈশ্বরের সাথে দেখা হয়
ভবতরী থামিয়ে হেল্পার একনাগাড়ে  ডাক দেন ---
মহিষাদল তমলুক ঘাটাল আরামবাগ ক্ষীরপাই তারকেশ্বর...
মন্ত্রমুগ্ধ কাকভোরে উঠে পড়ি জীবন পাড়ি দিতে !

আমার মতো যারা নিজেকে জন্ম দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা রাখেন 
কিংবা লড়াই দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চান নিজের নাম ,
তারাও লক্ষ শুক্রাণুর বেশে দৌড় জমান যন্ত্রযানে চড়ে

অভিজ্ঞ কন্ডাক্টর চিত্রগুপ্তিয় ঢঙে 
পূর্বাপর নোট অথবা রেজকির হিসেব ধরেন,
কার দৌড় কতদূর সে ভাগ্য নির্ধারিত হলে
ব্যগ্রচোখে ঈশ্বর তাকিয়ে দেখেন উৎসুক !

আবার সময় হলে পর 
কিছু মানুষ তুলে নেন , নামিয়ে দেন কিছু
এভাবেই আনুপাতিক হারে ভারসাম্য রাখেন দ্যুলোকের ।

জল নয় শব্দ দাও

কলতলায় পড়ে থাকা অবশিষ্ট জলটুকুনি না হয় 
আমার জন্য তোলা থাক ।
বারোমাসি বিপদ, ছুঁয়ে আছে প্রেমিকার নিবিড় চুম্বনের মত ।
 অভাবের তুলাদণ্ড ভেঙে দেখেছি
                     অক্ষরের সোহাগের চেয়ে 
বিপদজনক সময়ে --- সময়ের দাম ঢের বেশি ।

স্বপ্নের কোলাজ আর আমি 
এখনও বোঝাপড়ার দাম্পত্যে 
একই ঘরে বাস করি ।
সম্পর্কের আকর্ষণ ফিকে হতে হতে হেমন্তের কুহুতানে বিলীন ।
ঘাসের ওপর থেকে ছায়ার মতো উবে যাচ্ছে শবনম ।

আজকাল অক্ষরগুলো ঝাপসা লাগে চোখের সামনে !
উচ্ছিষ্টভোজী কুকুরের মতো হাতড়ে বেড়াচ্ছি বর্ণমালা !
খরার বাজারে হাঁফিয়ে উঠছি নিরন্তর , বড় তেষ্টা এবুকে ।
শুধু ভাবি কলতলার চাতালে পড়ে থাকা জল নয় 
                     দুটো নতুন শব্দ দাও
                         প্রাণ বাঁচাই !


কবিতা উৎসব

বড্ড বেআক্কেল হাঘরে লোকটা !
একদা জমাটি ছিল সব :
না-জানা ব্যাধিতে আজ হাভাতে দশা ।
খোরপোষ ছাড়া কে আর কার কাছে থাকে আজকাল ?
বউ-ছেলে-পিলে আরো যারা কাছের সবাই জিরাফ হয়েছে সময়ে !

কোনো এক পাগলে বলেছিল কবিতায় পেয়েছে চাষাকে ।
ওসব রোগ দুর্বোধ্য দুরারোগ্য ক্যানসার --- সারে না !

সারাদিন ছায়া হয়ে ভবঘুরে সূর্য মাথায় ফেরে ...
রাতের অন্ধকারে প্রহরীর মতো জেগে থাকে পৃথিবীর কোনায় !
গুনগুন স্বরে ফোটায় শব্দের আলো জোনাকি ...
অথবা সপ্তমে ঝাঁকুনি দিয়ে উথলে তোলে সুরের মশাল ---

সকাল হলে 'পর ঝরাপাতায় লিখে চলে অক্ষর !
কবিতা জন্মের লোভে সময় ধরে নেমে আসে জমিতে ---
এক একটি কবিতার বীজপত্র রোপন করে মাটি চষে !
জল দেয় --- অধীর বুক বেঁধে থাকে ফসলের প্রতীক্ষায় !

নবান্নের মতো যেদিন কবিতাফলে ভরে উঠবে মাঠ !
সেদিন সে লোক ডেকে ভাগ করে নেবে আলো !
             সেদিনই হবে কবিতার উৎসব ---
                      কবিতা উৎসব !


টুকরো হয়ে যাওয়া মিথ্যেবাদী লোকটা

'সদা সত্য কথা বলিবে'-লোকটা কেমন মিথ্যেবাদী হয়ে গেল ।
এতবড় ঘটনায় সবাই নির্বাক ! মানে থাকা কী যায় ? 
মনিব মক্কেল সংযোগী পইপই প্রশ্ন ছুঁড়ে গলা বসিয়ে কাহিল :
অভদ্র বারুনীর পুতুল বনে থেকে গেল , গর্জে উঠল না !

গোপালের মতো ছেলেরা তেল খেয়ে পথে-পাড়ায় দাঙ্গা চরায় :
পাঠশালা বন্ধ , খোলা থাকলে আফিম চালানে ভয় থাকে ;
যা কিছু ছিল সৃষ্টির সম্ভাবনা তা তো বর্ণপরিচয় ! চেতনার---
ফটকে কলুপ এঁটে স্রষ্টাকেই খানখান করে সন্তুষ্ট ষড়যন্ত্র ।

জন্ম থেকেই এপথে বাংলার সংস্কৃতিকে উলঙ্গ হাঁটতে দেখেছি ।
ঠাকুরের বাণী আর উপযোগিতার যেখানে বিস্তর ফারাক
যেখানে চোখের দেখাও উর্দি পরা লোকের হাতের পাকা ইলুশন
সেখানে ঐক্য বাক্য মানিক্য কী করে সফল সম্ভব হবে বুঝি না !

কবিজন্মযাপন

খামখেয়ালি বাতাস বয়ে গেলে আদুড় মন জুড়ে উচাটন
কখনও সমুদ্র কখনও পাহাড় নিরন্তর পর্যায়ের বদল ;
আলো-আঁধারি বৈচিত্র্য মেখে নস্টালজিক যেন আবেগ
মুহূর্তে গুনগুনিয়ে ওঠে রবি জীবন সুনীলের মতো কাব্যচরণ ।

কত ললনা স্বপ্ন দেখে কত পাঠক সময় মাপে---জাকজমক 
সঙ্গ শুধোয় আশ্চর্য রোমান্সে কিংবা জীবনসঙ্গিনী হতে ।
সব ভালো সবই ভালো তবে নিবিড় সামাজিক ঘেরাটোপে !
ওখানেই বিপত্তি জেনো দানা বাঁধে অদৃশ্য ছত্রাকের বেশে ।

কত অন্ধকার পুড়ে যে সামান্য আলো ফোটে কয়জন জানে !
কত যন্ত্রণা কতখানি প্রশ্রয়কথা কতটুকু আশা নিয়ে হয় কাব্য ?
ভাঙার ভেতরকার গভীরতা উপশমের মধ্যকার আত্মত্যাগ ---
প্রতিনিয়ত শব্দ বুনে মরম সাজিয়ে দেয় তৃষিত ঠোঁটে ।

তবু আশ্চর্য বনে যাই মেলাতে পারিনা পূর্বাপর হিসেব 
প্রিয়মুখে সাংসারিক সংলাপ---অনিচ্ছার গভীর কথা 
কাব্য বড় প্রিয় , কবিও অধিক ; তবে স্বামীকবি , উঁহু !
ভেবে খুশি হই আমিও তবে কবি অসুখে দিয়েছি কাব্যজন্ম ।

------

Post a Comment

0 Comments