জ্বলদর্চি

কালীপদ চক্রবর্ত্তী


কা লী প দ  চ ক্র ব র্ত্তী  


অনাথ

পথের শিশুটা কেঁদে কেঁদে ফেরে
চায় শুধু কটা ভাত।
ছেঁড়া কাঁথা ছাড়া কিছু নেই আর
কেমনে কাটায় রাত।

সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা ও রাতে
একটানা চলে ভিক্ষা,
তোতাপাখিগুলো বুলি আওড়ায়
“সকলকে দেব শিক্ষা”।

এখনও এদেশে অনাহারে লোকে
আজও দেয় তার প্রাণ,
তাদের জন্য কেউ ভেবেছো কি?
এগিয়ে দিয়েছো ত্রাণ?

কতদিন তারা স্বপ্ন দেখেছে
পেট ভরে খাবে ভাত।
বিনিময়ে তারা কিছু পায় নি
কষ্টে কেটেছে রাত।
সূর্য উঠলেই বিভীষিকা দেখে
ভাবে কেন ভোর হয়।

মানুষ জীবেরা আড়চোখে দেখে
ভাবে ওরা কেউ নয়।


সান্ত্বনা
                                         
ফোন তুলেই নম্বর ডায়াল করে জিজ্ঞাসা করলাম
কেমন আছিস ?
বলল, ভাল নেই রে !
আমি জানতাম কিছুদিন ধরে ‘কেমোথেরাপি চলছে,
নিছক মিথ্যা সান্ত্বনা দিতাম,
যদি কিছুদিন বেশি বাঁচে এই আশায়
পাড়ার রবীনদার থেকেই শিখেছি,
যখন ভোট আসত তখন দেখেছি
কিভাবে সান্ত্বনা  বাক্য বলতে হয়,
জীবনটাই তো মিথ্যেতে ভরিয়ে দিয়েছে
কোনটা মিথ্যে আর কোনটা সত্যি 
তফাৎ খুঁজে পাওয়া ভার।

পরের দিন ফোন করে খালি ‘কলার টিউন’ শুনলাম
কেউ ফোন তুলল না। সারাদিন কথা হল না,
একটা এস এম এস আমাকে ভেঙে চুরমার করে দিল
লেখা ছিল – 
ক্যান্সার হলে কেউ বাঁচে না, আমি জানতাম
আমি চললাম রে, আবার দেখা হবে বন্ধু,
যদি পারিস সমাজটাকে বাঁচাস,
সত্যি কি তাকে বাঁচানো যাবে?
অঘটন তো আজও ঘটে ।
(আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং অন্তরঙ্গ বন্ধু শ্যামল ঘোষ দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছিল, গত ২৮শে জানুয়ারি ২০১৩ – র বিকেলে ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। ওর উদ্দেশ্যে সম


রঙফানুষের নেশা

রঙের নেশায় মানুষগুলো
নাচছে কেমন নাচছে রে,
সর্বাঙ্গে তার কাদার প্রলেপ,
তবুও কেমন হাসছে রে।


পুতুল নাচের এই দুনিয়ায়,
প্রলয় নাচন নাচছে ঐ,
সাপের বিষে গরল জেনেও,
নেশা ছাড়তে পাড়ছে কৈ?

নীলকণ্ঠ হবার আশায়,
বিষ-সমুদ্রে দিচ্ছে ঝাঁপ,
যৌবনের ঐ উদ্যমতায়,
জেনেশুনেও করছে পাপ।

দিন-দুপুরে মুখোশ পরে,
শোনায় কত নতুন গান,
সন্ধে হলে তারাই আবার,
‘ম’-এর নেশায় মজা পান।

রঙ প্রদীপের চমকেতে,
চামচিকেরাও দিচ্ছে প্রাণ,
ভদ্র, সভ্য মানুষগুলো,
কেমন করে বাঁচায় মান?


রেসের ঘোড়া

রেসের ঘোড়াটা দৌড়ে চলেছে,
মুখদিয়ে অজস্র ফেনা ঝরছে,
সেদিকে তাঁর ভ্রূক্ষেপ নেই,
জকির ইশারায় কলের পুতুলের মতো-
দৌড়ে চলেছে এক অদ্ভুত আনন্দের আশায়,
হয়তো এই ভেবে যে সে জ্যাকপটটা জিতবেই।
কিন্তু তাঁর কতটুকু লাভ হবে সে ভাবছে না,
এ এক আত্মবলিদান ছাড়া কিছু নয়।
ভালোভাবেই জানে যে –
পড়ে গেলে তাকে গুলিখেয়ে মরতে হবে।
কিন্তু তবুও তাঁকে দৌড়োতে হচ্ছে জকির ইশারায়,
সবুজ ঘাসের দিকে তাকিয়ে জীবনটাকেও
রাঙিয়ে ফেলেছে সবুজ করে।
কোথাও কোন প্রতিশ্রুতি নেই,
আছে শুধু চাবুকের আঘাত আর –
দুবেলা দুটো খাওয়ার তাগিদ।
উদ্দেশহীন ভাবে উন্মত্তের মতো ছোটা
ছোটবেলা থেকেই তোতাপাখির মত শেখা,
কিছুতেই ভোলানো যায় না অভ্যেসটাকে,
তাই ছুটে চলেছে অজানা অন্ধকারের দিকে।


 নবকুমারকে দেখেছেন কি?

জনবহুল রাস্তাদিয়ে একটি লোককে রোজ দেখাযায়
একই প্রশ্ননিয়ে সে এগিয়ে চলছে,
লোকে তাকে পাগল বলেই জানে
চোখে তাঁর প্রশ্নের ঝলক, কিন্তু নিরাশার নয়,
সে ভাবছে উত্তর সে পাবেই, কিন্তু কেউই উত্তর দিতে পারছেনা।

কিন্তু তবুও দমেনি সে, সে জানে উত্তর সে পাবেই,
তাঁর প্রশ্ন “আপনারা কেউ নবকুমারকে দেখেছেন কি?
হঠাৎ সে নিখোঁজ হয়েছে, আমাদের মধ্যে থেকে
বা আবার কাপালিকের কবলে পড়ছে ।

নবকুমারকে একসময় দেখা যেত আমাদের সমাজে,
প্রতিটি ব্যক্তির অন্তর আত্মায়,
কিন্তু ধীরে ধীরে সে হারিয়ে গেল,
কোথায় গেছে কেউই জানে না।

আজ আমাদের মধ্যে নবকুমারের বড় প্রয়োজন,
বঙ্কিমচন্দ্র কখনো ভাবেন নি যে
তাঁর সৃষ্টিও এমনি করে হারিয়ে যেতে পারে,
আসুন, আমরা নবকুমারকে খুঁজে বার করি,
সুন্দর করে গড়ে তুলি আমাদের সমাজকে।
আমরা চেষ্টা করলে অবশ্যই তাঁকে খুঁজে পাবো,
তার জন্য স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের পুলিশের প্রয়োজন নেই,
শুধু প্রয়োজন আমাদের ইচ্ছা, ধৈর্য এবং সহনশীলতার।

---------

Post a Comment

1 Comments

  1. কবিতা গুলি আলাদা আলাদা ভাবে উজ্জ্বল। চমৎকার প্রকাশভঙ্গি!

    ReplyDelete